যুক্তির উৎকর্ষ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে সাইবার অপরাধ। দৈনন্দিন জীবনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নির্ভর হয়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাইবার অপরাধীদের টার্গেটে পরিণত হচ্ছেন নিরীহ ব্যবহারকারীরা। বিভিন্ন কৌশলে প্রতারণা করা হচ্ছে তাদের সঙ্গে। তবে সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপগুলোর মধ্যে জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্ম টেলিগ্রামে সাইবার অপরাধীদের বেশি আনাগোনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে ইদানীং।
সাইবার সিকিউরিটি ফার্ম ক্যাসপারস্কির ফুটপ্রিন্ট ইন্টেলিজেন্সের রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রতারণার জন্য টেলিগ্রামকে বেছে নিচ্ছেন বেশির ভাগ সাইবার অপরাধী। হ্যাকিং, স্প্যামিং ইত্যাদি কার্যক্রমের জন্য টেলিগ্রামে বিভিন্ন গ্রুপ তৈরি করে অপরাধীরা। ফ্রড স্কিম, ফাঁস হওয়া ডাটাবেস ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে এসব গ্রুপে।
সিকিউরিটি ফার্মের মতে, চলিত বছরের গত দুই মাসে এ ধরনের ডাটার পরিমাণ ৫৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। বিষয়টি বেশ উদ্বেগজনক বলে মনে করা হচ্ছে। বর্তমানে ইনস্ট্যান্ট মেসেজিং অ্যাপ হিসাবে জনপ্রিয়তার দিক থেকে হোয়াটসঅ্যাপের পরই রয়েছে টেলিগ্রাম। ছবি শেয়ারিং, ভিডিও-ভয়েস কলসহ একাধিক সুবিধা রয়েছে এই প্ল্যাটফর্মে।
টেলিগ্রামে সাইবার অপরাধ বৃদ্ধি পাওয়ার পিছনে একাধিক কারণ দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা মনে করছেন, প্রথমে টেলিগ্রাম ৯০ কোটি মাসিক ব্যবহারকারীর একটি বড় অংশ ইউজার বেস তৈরি করেছে। তারপর নিরাপদ ও প্রাইভেট প্ল্যাটফর্ম হিসাবে নিজেদের মার্কেট করেছে। টেলিগ্রামে ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করা হয় না বলে দাবি করা হলেও বাস্তব চিত্র সম্পূর্ণ উল্টো। এসব প্রতিশ্রুতি দিয়ে সাইবার অপরাধীদের চোখে ধুলো দেওয়ার চেষ্টা করা হলেও টেলিগ্রাম সেই প্রচেষ্টায় অনেকটাই ব্যর্থ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ এই প্ল্যাটফর্মে চ্যানেল খোলা খুবই সহজ। সুযোগটি কাজে লাগিয়ে সেখানে বিভিন্নভাবে ভুয়া তথ্য ছড়াচ্ছে সাইবার অপরাধীরা। পাশাপাশি ভুয়া লিংক পাঠিয়ে ব্যবহারকারীদের সঙ্গে জালিয়াতি করা হচ্ছে।
ডার্ক ওয়েব নিয়ে সাইবার অপরাধীদের বিভিন্ন দাবিতেই টেলিগ্রামের প্রসঙ্গ থাকে। শুধু সাইবার অপরাধ নয়, হ্যাক্টিভিস্ট গ্রুপগুলোর জন্য প্রিয় প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠেছে টেলিগ্রাম। হ্যাক্টিভিস্ট গ্রুপগুলোর সক্রিয়তা বাড়ছে সামাজিক যোগাযোগের এ প্লাটফর্মে।
অবশ্য প্রতারণার হাত থেকে বাঁচতে ব্যবহারকারীদের এক্ষেত্রে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে টেলিগ্রাম। যেকোনো তথ্য বা লিংকের সত্যতা যাচাই করে তাতে ক্লিক করতে বলা হয়েছে। কেননা এর ফলে ফোনে ম্যালওয়্যার ভাইরাস প্রবেশ করতে পারে। বিভিন্ন কৌশলে হ্যাক হতে পারে স্মার্টফোন ও ব্যাংকিং তথ্য। তাই কোন গ্রুপ বা লিংক ভুয়া বলে সন্দেহ হলে তা এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছেন সাইবার বিশেষজ্ঞরা।