বাংলাদেশ

চীনকে হারিয়ে মংলা বন্দর ভারতের!

9483_IMG_9214.jpeg

বাংলাদেশের দ্বিতীয় সমুদ্রবন্দর মোংলা পোর্টে আধিপত্য বিস্তারের যুদ্ধে চীনকে টেক্কা দিয়েছে ভারত। দেশটি এই বন্দর ব্যবহারের পাশাপাশি এখানে একটি টার্মিনাল নির্মাণ ও তা পরিচালনার অধিকার পেয়েছে। গত জুন মাসের শেষ সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরকালে দুই দেশের মধ্যে এ সংক্রান্ত একটি চুক্তি হয়েছে। আর ওই চুক্তির আওতায় ভারতকে মোংলা সমুদ্র বন্দরে একটি টার্মিনাল নির্মাণ ও তা পরিচালনার সুযোগ দেওয়া হয়েছে।

খবর ফার্স্ট পোস্ট ও সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের।

ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে বাংলাদেশ কৌশলগতভাবে ক্রমেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠছে। এ কারণে বিশ্বের নতুন দুই বড় শক্তি চীন ও ভারতের নজর এখন বাংলাদেশে। দেশ দুটি বাংলাদেশের কৌশলগত কয়েকটি জায়গায় নানাভাবে তাদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চায়। মোংলা বন্দর এসব অবস্থানের একটি। বছরের পর বছর দেশ দুটি শকুনির চোখে তাকিয়ে আছে বন্দরটির দিকে। দুটি দেশই এই বন্দর পরিচালনার দায়িত্ব পাওয়ার শীতল লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিল। এ লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত ভারত বহু দূর এগিয়ে গেছে; বলা যায় চীনের নাগালের বাইরে চলে গেছে দেশটি।

২০১৮ সালে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পাদিত এক চুক্তির আওতায় ২০২২ সাল থেকে ভারত চট্টগ্রাম বন্দর ও মোংলা বন্দর ব্যবহার করছে। মূলতঃ দেশটির  স্থলবেষ্টিত সাত রাজ্যে (সেভেন সিস্টার্স) ট্রান্সশিপমেন্টের মাধ্যমে পণ্য আনা-নেওয়ার কাজে এই বন্দরটি ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে তাতেই সন্তুষ্ট নয় দেশটি। তারা এই বন্দর পরিচালনার দায়িত্ব পাওয়ার জন্য নানাভাবে চেষ্টা করে আসছিল। অবশেষে তারা সাফল্যের মুখ দেখতে পেয়েছে।

প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সর্বশেষ ভারত সফরকালে যে কয়কেটি সমঝোতা স্মারক ও চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে, তারই একটির আওতায় দেশটিকে মোংলা সমুদ্র বন্দরে টার্মিনাল নির্মাণ ও পরিচালনার এখতিয়ার দেওয়া হয়েছে। ভারতের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ইন্ডিয়ান পোর্ট গ্লোবাল লিমিটেড এই বন্দরের টার্মিনালটি পরিচালনা করবে।

তবে চুক্তিটিতে কী কী বিষয় আছে, তা জানা যায়নি। কারণ চুক্তিটি কোনো দেশই প্রকাশ করেনি। দুটি দেশই এ চুক্তির বিষয়ে বেশ গোপনীয়তা অবলম্বন করছে।

ভারতের সামরিক-বেসামরিক বিশ্লেষকদের মতে, মোংলা বন্দরে টার্মিনাল নির্মাণ ও তা পরিচালনার দায়িত্ব পেলে ভারত নানাভাবে লাভবান হবে। প্রথমত: এই বন্দর ব্যবহার করে আরও সহজে সেভেন সিস্টার্স নামে পরিচিত সাত রাজ্যে পণ্য পরিবহণ করতে পারবে। তাতে সময় ও ব্যয় অনেক কমে আসবে।

দ্বিতীয়তঃ মোংলা বন্দর ব্যবহারের ফলে কলকাতা বন্দরের উপর চাপ কমবে। হুগলী নদীর নাব্যতা কমে যাওয়ায় কলকাতা বন্দরের দক্ষতা কিছুটা কমে গেছে। তাই বিকল্প ব্যবস্থার মাধ্যমে বন্দরটির উপর থেকে চাপ কমানো গেলে সব দিক দিয়েই ভারতের জন্য লাভজনক।

তৃতীয়তঃ আলোচিত সাত রাজ্যে যোগাযোগ ও পণ্য পরিবহনে ভারতকে শিলিগুড়ি করিডোরের উপর অনেকাংশে নির্ভর করতে হয়। কোনোভাবে চীন এই করিডোরের নিয়ন্ত্রণ নিতে পারলে রাজ্য সাতটি কার্যত ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। মোংলা বন্দর ব্যবহার এই ঝুঁকি কিছুটা কমাতে ভূমিকা রাখবে।

চতুর্থত: মোংলা বন্দর পরিচালনার ক্ষমতা পেলে মহাসাগরের পূর্ব ও পশ্চিম অংশে ভারতের আধিপত্য বাড়বে। আঞ্চলিক নিরাপত্তা তথা সামরিক দিক দিয়ে আরও বেশি সক্ষমতা দেখাতে পারবে।

তবে ভারত মোংলা বন্দরে টার্মিনাল নির্মাণ ও তা পরিচালনা করলে বাংলাদেশের কতটুকু লাভ হবে, তা স্পষ্ট নয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, সংশ্লিষ্ট চুক্তির শর্ত এবং বিভিন্ন সেবার উপর কত মাশুল ধার্য করা হবে, তার উপর নির্ভর করবে বাংলাদেশের লাভের বিষয়টি। সংশ্লিষ্ট চুক্তিটি প্রকাশ না করায় এ বিষয়ে কোনো ধারণা করা যাচ্ছে না। তবে অতীতে ভারতকে দেওয়া ট্রানজিট ও ট্রান্সশিপমেন্ট চুক্তিতে বাংলাদেশ তেমনভাবে লাভবান না হওয়ায়, মোংলা বন্দরে টার্মিনাল নির্মাণ ও পরিচালনার বিষয়টি থেকেও তেমন লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।

সর্বাধিক পঠিত


ভিডিও