তালেবান দ্বিতীয় দফায় আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখলের পর আফগানিস্তানের বিভিন্ন স্থান থেকে সংগঠনটির নানা কর্মকাণ্ডের খবর পাওয়া যাচ্ছে।
গত সপ্তাহে কাবুল দখলের পর তালেবান সদস্যরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ১৫ বছরের বেশি মেয়েদের বিয়ে করার জন্য মেয়েদের তুলে আনছে বলে আফগানিস্তান থেকে পালিয়ে আসা হলি ম্যাককি নামে এক সাংবাদিক দ্য ডালাস মর্নিংকে জানান।
তিনি জানান, মাজার-ই-শরিফে তার বাড়ি থেকে তিনি পালাতে পেরেছেন। কিন্তু তার যেসব বন্ধুরা রয়ে গেছে তাদের নিয়ে উদ্বিগ্ন হলি।
তালেবান কাবুল দখলের আগে সেখানকার এক আশ্রয় কেন্দ্রে ১৪ বছর বয়সী এক কিশোরীর সাথে সাক্ষাৎ হয়েছিল হলির। মেয়েটি কুন্দুজ শহর থেকে পালিয়ে চলে এসেছিল পড়াশোনা শিখে চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে।
হলি আরেক আফগান নারী ফারিহা ইয়াসিরের কথা জানিয়েছেন। হলির ফরিহার সাথে সাক্ষাৎ হয়েছিল। তিনি ধুকতে থাকা দেশটিতে নারীদের ইতিবাচক পরিবর্তনের জন্য লড়েছেন। সামনে এনেছেন বহু নারীদের করুণ কাহিনীর। হলি জানান, তালেবান দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতা দখলের পর পুরোপুরি ভেঙে পড়েছেন ফারিহা।
হলি দ্য ডালাস মর্নিংকে বলেন, ফারিহাকে তার বাইরের দেশের বন্ধুরা বারবার তাকে আফগানিস্তান ছাড়ার জন্য অনুরোধ করেছেন। কিন্তু নিজ দেশের মেয়েদের বিপদে পাশে দাঁড়াতে চেয়েছেন ফারিহা।
হলি জানান, ফারিহা আমাকে বলেছিল তালেবান বাড়ি বাড়ি গিয়ে ১৫ বছরের বেশি বয়সী মেয়েদের বিয়ে করার জন্য খুঁজছে। কয়েকমাস আগেই বাদাখশানের পতন হয়েছিল। এক মাস আগে বাদাখশানে তার এক বন্ধুর বাড়িতে গিয়েছিল তালেবান। সেখানে গিয়ে তালেবান বিয়ের জন্য কিশোরী মেয়েদের খুঁজছিল।
হলি জানান, তালেবান এক বাবার কাছে গিয়ে তার মেয়েকে বিয়ে করতে চান। ২১ বছর বয়সী মেয়েটিকে বিয়ে দেওয়া হয় এক তালেবান সদস্যের সাথে। বিয়ের পর মেয়েটিকে নিয়ে যায় তারা।
হলি তার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে জানান, ১৪ আগস্ট রাতে মাজার-ই-শরিফ পতনের পর রাতারাতি তা নারী শূন্য ভূতুড়ে নগরীতের পরিণত হয়। দিনের বেলায় অল্প কয়েকজন নারীদের নীল বোরকায় আবৃত হয়ে বাইরে বের হতে দেখেছেন তিনি।
এর আগে ১৯৯৬-২০০১ সালের শাসনামলে তালেবান নারীদের স্কুল ও কর্মক্ষেত্রে যাওয়ার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল। পুরুষ আত্মীয় ছাড়া নারীদের বাইরে যাওয়া নিষিদ্ধ ছিল। এমনকি বাইরে বের হওয়ার সময় নারীদের চেহারা দেখানো পুরোপুরি নিষিদ্ধ ছিল।
তবে এবার নিজেদের রক্ষণশীল মনোভাব থেকে অনেকটাই সরে এসেছে বলে দাবি করছে তালেবান। কাতারের দোহায় তালেবানের রাজনৈতিক দপ্তরের উপপ্রধান আব্দুস সালাম হানাফি নারী চাকরিজীবীদের কর্মস্থলে ফিরে আসার আহ্বান জানিয়েছেন।
এই আশ্বাসের পরও আফগানিস্তান ছাড়তে মরিয়া হয়ে উঠেছে সাধারণ মানুষ।
কিছুদিন আগেই তালেবানের ভয়ে ছাত্রীদের রেকর্ড পুড়িয়ে দিয়েছেন আফগানিস্তানের একমাত্র মেয়েদের বোর্ডিং স্কুলের সহ-প্রতিষ্ঠাতা শাবানা বাসিজ-রাসিখ।
তালেবান সদস্যরা যেন এই স্কুলের শিক্ষার্থীদের খোঁজ না পায় তাই এসব রেকর্ড পুড়িয়ে দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন শাবানা।
টুইটারে শাবানা ছাত্রীদের রেকর্ড পোড়ানোর ব্যাপারে লিখেছেন, আফগানিস্তানের একমাত্র মেয়েদের বোর্ডিং স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে আমি সব ছাত্রীর রেকর্ড পুড়িয়ে দিয়েছি। ছাত্রীদের মুছে ফেলতে নয়, তাদের ও তাদের পরিবারকে রক্ষা করতে।
অন্যদিকে, তালেবানের হাত থেকে বাঁচতে আফগান নারী ফুটবলারদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে থাকা নিজেদের অ্যাকাউন্ট ও পাবলিক পরিচয় মুছে ফেলার আর জার্সিসহ সব খেলার সরঞ্জাম পুড়িয়ে ফেলার আহ্বান জানিয়েছেন আফগান নারী ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক খালিদা পোপাল।