আইন- আদালত

জুলাই হত্যাকাণ্ডের নির্দেশ দিয়েছিলেন সেনা-পুলিশের সাবেক ৮ কর্মকর্তা

10590_IMG_2777.jpeg

সেনাবাহিনী ও পুলিশের সাবেক ৮ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলে আরো দুমাস সময় দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। তাদের বিষয়ে আগামী ২৮ এপ্রিল তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

প্রসিকিউশনের আবেদনে চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আসামিদের উপস্থিতিতে আজ  বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) এই আদেশ দেন। ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য হলেন- হাইকোর্টে অতিরিক্ত বিচারক মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মহিতুল হক এনাম চৌধুরী।

আসামিরা হলেন- সাবেক পুলিশ প্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, সেনাবাহিনীর জাতীয় টেলিযোগাযোগ পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র (এনটিএমসি)’র সাবেক মহাপরিচালক জিয়াউল আহসান, ঢাকার সাবেক পুলিশ সুপার মো. আব্দুল্লাহ আল কাফি, ঢাকা মহানগর পুলিশের মিরপুর জোনের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. জসিম উদ্দিন মোল্লা, সাভার সার্কেলের সাবেক অতিরিক্ত সুপার মো. শহিদুল ইসলাম, যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান, গুলশান থানার সাবেক ওসি মো. মাজহারুল হক ও ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) সাবেক পরিদর্শক মো. আরাফাত হোসেন। আদেশর সময় আসামিদের ট্রাইব্যুনালের কাঠগড়ায় তোলা হয়।

আদালতে প্রসিকিউশনের সময় আবেদনে শুনানি করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। সঙ্গে ছিলেন প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামিম, আব্দুল্লাহ আল নোমান ও বি এম সুলতান মাহমুদ।

জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডের নির্দেশ দিয়েছিলেন তারা:

শুনানিতে তদন্তের অগ্রগতি তুলে ধরে চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, ‘জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডের বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজ, জব্দকৃত গুলির ফরেনসিক পরীক্ষা চলছে। হাসপাতাল থেকে ডেথ সার্টিফিকেট সংগ্রহ করা হচ্ছে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে গণশুনানির আয়োজন করা হচ্ছে, যেখানে শিক্ষার্থীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে এসে তাদের বক্তব্য রাখছেন। তারা নানা আলামত জমা দিচ্ছেন।

চিফ প্রসিকিউটর বলেন, ‘এই ৮ জনের ৭জনই পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ছিলেন। তারা সুপিরিয়র কমান্ড রেসপনসিবিলিটি ব্যবহার করে জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডের নির্দেশ দিয়েছেন। কেউ কেউ মাঠে থেকে সরাসরি হত্যাকাণ্ডে অংশ নিয়েছেন। ব্যাপক পরিসরে তদন্ত চলছে। তার জন্য আরো দুমাস সময় দরকার।

’ এরপর আদালত তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ২৮ এপ্রিল তারিখ দেন।

তারা নির্যাতনের চ্যাম্পিয়নদের অন্যতম:
এ ছাড়া গুমসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় পুলিশের সাবেক দুই কর্মকর্তা মহিউদ্দিন ফারুকী (সাবেক পুলিশ সুপার) ও আলেপ উদ্দিনের (বরিশাল রেঞ্জের সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার) বিষয়ে ২৮ মে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলেছেন ট্রাইব্যুনাল। প্রসিকিউশনের সময় আবেদন মঞ্জুর করে এই আদেশ দেওয়া হয়।

এ দুই সাবেক কর্মকর্তার শুনানিতে চিফ প্রসিকিউটর বলেন, ‘এই দুজনই র‌্যাবে ছিলেন। তারা জোরপূর্বক গুমের সঙ্গে জড়িত। বহু মানুষকে তারা গোপন বন্দিশালায় রেখে নানাভাবে নির্যাতন করেছেন। গোপনাঙ্গে বৈদ্যুতিক শক দিয়েছেন। তারকাটাযুক্ত জুতা পরতে বাধ্য করেছন। গুমের মামলায় তাদের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। তারা নির্যাতনের চ্যাম্পিয়নদের অন্যতম। তাদের বিষয়ে তদন্ত করতে আরো সময় প্রয়োজন। আমরা দুমাস সময় চাচ্ছি।’ এরপর আদালত ২৮ তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ দেন।

সাবেক আইজিপি মামুন ও আলেপকে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি:

পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনকে সেফহোমে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের শুনানিতে চিফ প্রসিকিউটর বলেন, ‘সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের নির্দেশ সরাসরি বাস্তবায়ন হয়েছে তার মাধ্যমে। জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে হেলিকপ্টার থেকে গুলি করা হয়েছে। এই হেলিকপ্টার ব্যবহারে কারা পরিকল্পনা করেছে, কারা গুলি চালিয়েছে, তা আমাদের জানা দরকার। তাছাড়া চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনের কাছে যেসব ফোন ছিল, সেগুলো আমরা এখনো জব্দ করতে পারিনি। উনি (মামুন) বলেছেন, খুঁজে পাচ্ছেন না। এগুলোর বিষয়ে আমাদের উনাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে।’

আলেপ উদ্দিনকে জিজ্ঞাসাবাদের আবেদনে চিফ প্রসিকিউটর বলেন, ‘২০১৭-২০১৯ সাল পর্যন্ত তিনি র‌্যাবে কর্মরত ছিলেন। ২০১৮ সালে আলেপ একজন ব্যক্তিকে গুম করে। ওই ব্যক্তিকে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে তার স্ত্রীকে দুবার ধর্ষণ করেন তিনি। ওই নারী মারা গেছেন। আলেপের বিরুদ্ধে ১০টি অভিযোগ এসেছে। তদন্তের স্বার্থে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন।’ শুনানির পর আদালত চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনকে ২৩ ফেব্রুয়ারি এবং আলেপকে ২৬ ফেব্রুয়ারি জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন।

সর্বাধিক পঠিত


ভিডিও