ইসলাম

মা’র দোয়া কবুল হয়েছিল, কিন্তু ধরে রাখতে পারেননি: কাবার ইমাম থেকে বিজ্ঞাপনের মুখ

11602_Untitled-1-294.jpg

শায়খ আদেল আল-ক্বলবানী: এক সময়ের কাবা শরীফের সম্মানিত ইমাম, পরবর্তীতে মিডিয়া ও বিনোদন জগতে অংশগ্রহণ করে ইসলামী জগতে আলোচিত এবং বিতর্কিত এক নাম। তাঁর জীবনের এক বিশেষ ঘটনা সামাজিক মাধ্যমে সম্প্রতি আলোচনায় উঠে এসেছে, যেখানে তিনি বলেন, রাগের মাথায় তাঁর মা বলেছিলেন, "আল্লাহ তোকে কাবার ইমাম বানাক" — আর সেই কথাই আল্লাহ কবুল করেছিলেন।


কাবা শরীফের ইমামতির যাত্রা

আদেল আল-ক্বলবানী ২০০৮ সালে কিং আব্দুল্লাহর নির্দেশে কাবা শরীফের ইমাম হিসেবে নিয়োগ পান। তার আগে তিনি দীর্ঘদিন রিয়াদের মসজিদে ইমাম হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তার কণ্ঠস্বর, ক্বিরাত ও আবেগঘন দুআ তাঁকে জনপ্রিয় করে তোলে মুসলিম বিশ্বের মাঝে।


ধর্মীয় অবস্থান ও মতবাদের পরিবর্তন

একসময় তিনি শিয়া সম্প্রদায়কে ‘কাফির’ বলে আখ্যা দেন, যা বিশ্ব মুসলিম সমাজে বিতর্ক সৃষ্টি করে। তবে পরবর্তীতে তিনি নিজ বক্তব্য থেকে সরে এসে বলেন, “যে ব্যক্তি ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলে সে মুসলিম।” তাঁর এই পরিবর্তন অনেকেই ‘আত্মসমালোচনার ফল’ বলে অভিহিত করেন, আবার কেউ কেউ এটিকে রাজনৈতিক চাপের ফসল বলেও ব্যাখ্যা করেন।


মিডিয়া ও বিনোদন জগতে পদচারণা

২০১৯ সালের পর থেকে শায়খ আল-ক্বলবানী সৌদি আরবের বিভিন্ন প্রমোশনাল ক্যাম্পেইনে অংশ নিতে শুরু করেন। বিশেষ করে ২০২১ সালে রিয়াদ সিজন উপলক্ষে একটি ভিডিও বিজ্ঞাপনে অংশগ্রহণ করেন যেখানে তাকে যুদ্ধের পোশাকে দেখা যায়। ভিডিওটি সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হলেও মুসলিম সমাজের একাংশ এতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান। অনেকেই বলেন, "একজন প্রাক্তন ইমাম কীভাবে এমন চরিত্রে অভিনয় করতে পারেন?"


সমালোচনা ও বিতর্ক

বিভিন্ন সময়ে সামাজিক মাধ্যমে তাঁর মন্তব্য এবং আচরণ নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। কখনো পশ্চিমা ধাঁচের পোশাক, কখনো নারী প্রসঙ্গে বক্তব্য—সবই মুসলিম সমাজে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে। কেউ বলছেন, তিনি ইসলামের একটি নমনীয় রূপ তুলে ধরছেন, আবার কেউ বলছেন, তিনি ইসলামী মূল্যবোধ থেকে সরে যাচ্ছেন।

উপসংহার

শায়খ আদেল আল-ক্বলবানীর জীবন আজ একটি দ্বিধা-বিভক্ত অবস্থানে ধর্মীয় গাম্ভীর্য আর সামাজিক উদারতার এক চমকপ্রদ মিশ্রণ। তাঁর মায়ের কথাটি সত্যি হয়েছিল তিনি কাবার ইমাম হয়েছিলেন। তবে সে সম্মান ধরে রাখা কঠিন ছিল, কারণ সময়ের পরিবর্তন, মতাদর্শের সংঘাত এবং নিজের ব্যক্তিত্বের বিস্তার তাকে এমন এক পথে নিয়ে গেছে, যা অনেকের কাছে ‘ধর্মীয় বিচ্যুতি’।


সোর্স: আরব নিউজ, বিবিসি আরবিক, সৌদি গেজেট, সোশ্যাল মিডিয়া

সর্বাধিক পঠিত


ভিডিও