ইসলাম

বিশ্বের দরবারে পাড়ি দিতে চলেছে জয়নগরের প্রসিদ্ধ মোয়া! শীতে বাঙালি মানেই মোয়াপ্রেমী

648_46A3D097-C5E3-4D92-8C64-30FEB78E1009.jpeg

পায়েল দেব, পশ্চিমবঙ্গ: কথায় আছে যে বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। তেরো পার্বণ এর মধ্যেও শীতের আমেজ চেটেপুটে নিতে চায় ভোজন রসিক বাঙালি। শীতকালের  বাঙালি প্রিয় হচ্ছে "মোয়া"। যদি এই সময় মোয়া পেটে না পড়ে বাঙালির, তাহলে যেন গোটা শীতের মধ্যে কিছু একটা বাদ যাচ্ছে বলে মনে হয়।

প্রসঙ্গত জনশ্রুতি অনুসারে জয়নগরের মোয়া আবিষ্কার হল জয়নগর শহরের নিকটবর্তী বহরু গ্রামে। জনৈক যামিনী বুড়ো এক অনুষ্ঠানে তিনি নিজের খেতে উৎপাদিত কনকচূড় ধানের খই ও নলেন গুড় দিয়ে মোয়া প্রস্তুত করে পরিবেশন করে। জয়নগর শহরে জনপ্রিয় হয়েছে জয়নগরের মোয়া প্রস্তুত করে।  এই ব্যবসা মহানগর-সহ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। তখন থেকে ব্যবসায়ীরা জয়নগরের মোয়া তৈরি করতে থাকে।

১৯২৯ সালে পূর্ণ চন্দ্র ঘোষ, নিত্য গোপাল সরকার এবং জয়নগরের বহুরু তাদের তৈরি কারখানা স্থাপন করেন,পাশাপাশি নগরীর প্রধান উৎপাদনের গড় ও কাজুবাদাম কিসমিস পোস্ত ব্যবহার করা হয় ।দক্ষিণ ২৪ পরগনার  কাকদ্বীপ, নামখানা ,ডায়মন্ড হারবার, গঙ্গাসাগর এলাকায় প্রচুর পরিমাণে কনকচূড় ধানের চাষ হয়। সেই ধানের খই মোয়া কাজে ব্যবহৃত করা হয়।আর শীতকালে খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে মোয়া তৈরি করা হয়। সবচেয়ে বেশি রস পাওয়া যায় কৃষ্ণনগর, নদীয়া, সুন্দরবনের বেশিরভাগ খেজুর গাছকে এই রসের জন্য ব্যবহৃত করা হয়। অর্থাৎ খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে রাখা হয় তার রস জাল দিয়ে তৈরি হয় গুড়। সেই গুড় খই সাথে মেশানো হয় । তার সঙ্গে প্রসিদ্ধ গাওয়া খাঁটি ঘি কাজু ,কিসমিস ব্যবহৃত হয়।বহুরু অতি প্রাচীন মোয়ার দোকান বীণাপাণি মিষ্টান্ন ভান্ডার ও শ্যামসুন্দর মিষ্টান্ন ভান্ডার।

বীণাপাণি মিষ্টান্ন ভান্ডার এর অধিকর্তা মহাদেব দাস ও গনেশ দাস বলেন, আমাদের এই মোড়ের দোকান ১৪০ বছরের পুরাতন মিষ্টান্ন দোকান। দেশ-বিদেশে আমাদের বীণাপাণি মিষ্টান্ন ভান্ডারে মোয়া সাড়া জাগিয়েছে। গত দু'বছর ধরে করোনার জন্য আগের তুলনায় অনেকখানি মোয়ার চাহিদা কমেছে। এবছর করোনার উপর খানিকটা লাগাম টেনেছে রাজ্য সরকার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। লকডাউনে শিকল ভেঙ্গে করোনা স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্বাভাবিক ছন্দে ফিরেছে সবকিছু। শীতকালে জয়নগরের অতি সুপরিচিত মোয়ার চাহিদা শীর্ষে থাকে। কিন্তু মোয়ার দাম একই আছে কোনও বাড়ানো হয়নি। ভালো  মোয়ার দাম ২৩০ -২৪০ টাকা কেজি। ভালো মোয়ার দাম ১২০-১৩০ টাকা কেজি।  তেমনি বহুরু শ্যামসুন্দর মিষ্টান্ন ভান্ডারের অধিকর্তা বাবলু ঘোষ ও রঞ্জিত ঘোষ তাদের মোয়ার ঐতিহ্য আজও ধরে রেখেছে। তাদের শ্যামসুন্দর মিষ্টান্ন ভান্ডার অনেক পুরাতন দোকান। তাদের মোয়ার গুণগত মান ও দাম একই রয়েছে। জয়নগরের সুপরিচিত ঐতিহাসিক এখন বিশ্ব দরবারে পাড়ি দিতে প্রস্তুত।

সর্বাধিক পঠিত


ভিডিও