কবিতা

কামাল তৈয়বের চারটি কবিতা

372_FB_IMG_1633969715441.jpg

কামাল তৈয়বের চারটি কবিতা

কামাল তৈয়বের চারটি কবিতা 

-----------------------------------------------------------

সিলেটের ট্রেন
---------------
কামাল তৈয়ব

চোখজোড়া মনে আছে, মনে আছে হাতের আঙুল
মনে আছে আরো-
হু-হু করে তেড়ে গেলো সারারাত সিলেটের ট্রেন
কণ্ঠের ভেজানালী বারবার কাঠ হয়ে এলো 
শুকোতে শুকোতে।
                   চোখের ভেতরে চোখ হারালো ভীষম
জলে ডুবু ডুবু; তবু জল নয় ; জলের গেলাশ
সেইখানে ভাসে ছবি, আমি দেখলাম নিজেরে কেবল

পথের প্রেয়সী আমি জেনেও জানি নি সেই লুকোচুরি খেল
তুমি কারে দেখেছিলে সেইদিন, সেইরাত - সারারাত ধরে
তবে কি আমারে নয়? বলো কারে? বলো, বলো কারে
নাকি সেই গূঢ়কথা তুমি নও; তোমার তোমারে

মনে আছে চোখজোড়া
আরো মনে আছে
                 সেই হাতের আঙুল
চুরি করে রেখেছিলে ইশারার হাতখানি পিঠের পেছনে
তখন রাতের ট্রেন বীরবেশে ফঁুকেছিলো শেষ হুইসেল
আমার ঠিকানা লেখা চিরকুট ছঁুয়েছিলো হাতের আঙুল
হৃদয় জাহাজী প্রেম নোঙর ফেলেছে ভেবে শুকোর শুকোর
দেখেছি তখন আমি কাঁপাকাঁপা লোকালয় ভীতি
নোখের উপর দিয়ে এঁকেবেঁকে হেঁটে হেঁটে গেছে

সাথে তিনি কে ছিলেন? মায়ের বংশ? নাকি বাবার মুকুর

হয়তোবা হতে পারে সে তোমার এ ট্রেনের
ক্ষণিকের লোভনীয় বিলাসিতা ভ্রমণীয় প্রেমের কুকুর
তুমি তার জিভরাঙা লাল কুক্কুরী
?
হয়তোবা তুমি তার কিছু নও, হয়তো সকলি

তবু তুমি মনে আছো, মনে থাকে সারারাত সিলেটের ট্রেন
চোখজোড়া মনে থাকে, মনে থাকে হাতের আঙুল

--------------------------------------------------

তুমি সাপ, তুমি তেলাপোকা
------------------------
কামাল তৈয়ব

হাতে মাইক পাইয়া এতো বেসামাল হইয়ো না
পাতি বুদ্ধিজীবী থিকা মগজ বিক্রি কইরা ফ্রন্ট লাইনে দাঁড়াইছো-
হেইডা বেবাক মাইনষে না জানলেও - আমরা জানি।
খোলস পাল্টাইন্যা বিদ্যায়-
                           তুমি সাপ, তুমি তেলাপোকা

দল তোমারে কাছে ভিড়াইছে বইলা সাত তলায় উইঠ্যা গেছো!
গলায় রক্ত তুইল্যা যে বিষ উগরাইতাছো-
হেইডা দিয়া তারা কইলাম মেডিসিন বানাইবো
তারপর তুমি ঢোঁড়া, তুমি হইবা নর্দমার কীট

হাতে মাইক পাইলে সকলেই কিঞ্চিত বেসামাল হয়
তাই বইলা ভুয়া সনদ নিয়া তুমিও!

তোমার মগজ বিষয়ে আরজি লেখা হইতাছে
সুযোগ মতো তামাদি মওকুফ করাইয়া
                                   ওরা একখান প্রিয়েমশন স্যুট ঠুইকা দিবো

আর  যদি গুম তালিকায় কেউ তোমার নাম জুড়াইয়া দেয়
পাইয়াও যাইতে পারো জন্মের মতো আজাদীর চোখবুজা ঘ্রাণ

____________________________

উৎস
----------
কামাল তৈয়ব

না না ভুলবো না- আমি আর কোনোদিন ভুলবো না তারে
বনলতা ফিরে আয় সবুজের মহরতে তুই
এখানে আবার চাই শুকতারা হেসে যাক প্রেমের ন'বতে
তোর সে গালিচা ছুঁয়ে গুনগুন গান হবে, পাশাপাশি হেঁটে যাবো আমরা দু'জন
হলদে ফুলের প্রীতি গলায় জড়িয়ে রেখে আমরা পেরিয়ে যাবো সর্ষের ক্ষেত
সুরমার তীর ঘেঁষে বসবে প্রেমের সভা আমরা দু'জন হবো প্রধান অতিথি

জোনাকীর আলো দিয়ে মঞ্চ সাজানো হবে, স্বাগত ভাষণ দেবে শ্রাবণের মেঘ
শস্যের মঞ্জরী হাততালি দেবে আর শ্লোগানে ধ্বনিত হবে সুরমার জল
তুই এসে
সব শেষে
বকুলের মালা গেঁথে আমাদের দু' জনারে পরাতে পারিস

বনলতা ফিরে আয়, ফিরে আয় বনলতা সবুজের মহরতে তুই
দুষ্ট সময় ঘিরে শহরের রাজনীতি 'ঘন্না'য় চেটে খাওয়া পাংশুটে চঁাদ
সবাই ফিরবে আজ, আমিও এসেছি ফিরে তোর কোলে- আমাদের কিশোর গ্রামে
তুই যে আমার ঘাট
অভিশাপ তুলে নে গো, আমি আর কোনোদিন ভুলবো না তারে।

___________________________

 

ঘাস দোলে ঘাসে
-----------------------
কামাল তৈয়ব

তারে দেখা মানে লাল গোলাপের চোখজুড়ে প্রাণ পুজো দেয়া
নিজের হৃদয়টারে পাপড়িতে ম্লান করে ঘুমোনোর গান
আকাশ গড়ানো জল তৃষিত বালির মতো টেনে শুষে নেয়া
মনে হয় এই দেহ নিঃসাড়; তার দেহে লীন হলো প্রাণ

তার সাথে চলা মানে তীর্থের জমা করা পূণ্যের ডালি
তার সাথে কথা বলা মানে রাশি রাশি পাপ ধুয়ে মুছে নেয়া
ঝলসানো রূপ নিয়ে তারা ঝরা, নয়তোবা ঝরে পড়া কেয়া
মুখের আদল তার রাতের আঁধারে পুরো চাঁদ কপালি

দেখা হলো একদিন তার সাথে কারখানা কলোনির পথে
এমন শরীর ঢেকে স্বর্গ মাড়িয়ে কেউ এসেছে কখনও?
রাতের নেকাব এলো আমি তার ডানপাশে ছিলাম তখনও

তারপর ফিরে আসি; ফিরতেই হয় বলে আপনার রথে
পেছনে সুরমা নদী ঢেউ তোলে, কলোনির বাতিগুলো হাসে
ঘাস দোলে ঘাসে! তার মানে তারাও কি তারে ভালোবাসে?

সর্বাধিক পঠিত


ভিডিও