সিলেট

অ্যাডভোকেট জামানের পথ ধরে সিলেটে স্বেচ্ছাসেবক দলের শতাধিক নেতাকর্মীর একযোগে পদত্যাগ

105_Screenshot_20210826-101834_Business Suite.jpg

 

প্রভাবশালী নেতা অ্যাডভোকেট শামসুজ্জামান জামান দল ছাড়ার পর পদত্যাগ ঝড়ে অস্থির সিলেটের বিএনপি পরিবার। দলের দায়িত্বশীলদের তুলাধুনা করে তিনি দল ছাড়ার করার পর ঘোষণা দিয়ে পদত্যাগ শুরু করেন তার অনুসারীরাও।

বুধবার সিলেটে স্বেচ্ছাসেবক দলের ১৪ উপজেলার দায়িত্বশীলসহ শতাধিক নেতাকর্মী একযোগে পদত্যাগ করেছেন।

গত ১৮ আগস্ট বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহস্বেচ্ছাসেবক সম্পাদক অ্যাডভোকেট শামসুজ্জামান জামান দল ত্যাগের ঘোষণা দেন। এর দুদিন পর গত শনিবার রাতে সিলেট মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের নবগঠিত কমিটির ১০ নেতা পদত্যাগ করেন।

আরও দুদিন পর পদত্যাগ করেন সিলেট মহানগর তাঁতী দলের শীর্ষ তিন নেতা। এরই ধারাবাহিকতায় দায়িত্বশীলসহ স্বেচ্ছাসেবক দলের  শতাধিক নেতাকর্মী পদত্যাগ করেন।

সংগঠন ভিন্ন ও ধাপে ধাপে পদত্যাগের ঘটনা ঘটলেও দলত্যাগী এবং পদত্যাগকারীদের মুখে একই সুর। অভিন্ন অভিযোগ তাদের সবার। দলে ত্যাগী, পরীক্ষিতদের মূল্যায়ণ নেই বরং যোগ্যদের বেছে বেছে ‘অপদস্ত’ করা হচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ পদ-পদবি দিয়ে সংগঠনের দায়িত্ব তুলে দেওয়া হচ্ছে অযোগ্যদের হাতে।

পদত্যাগকারীরা বলছেন, পদত্যাগ ও দল ত্যাগের এটা শেষ নয়, শুরু মাত্র। বিএনপি, যুবদল ছাড়াও অন্যান্য অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনেও বিদ্রোহ চলছে। পদত্যাগ ও দল ত্যাগের আরও ঘোষণা আসবে শিগগির।

অ্যাডভোকেট জামান আনুষ্ঠানিকভাবে দলত্যাগের ঘোষণা দেয়ার সময় পাশের চেয়ারেই বসা ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা, সিলেট জেলা মুক্তিযোদ্ধা দলের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, কিছু চাটুকার দলকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। এদের কারণে জামান যে পথ বেছে নিয়েছে বাধ্য হয়ে সে পথ হয়তো আমিসহ আরও অনেককে অনুসরণ করতে হবে।

বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য ও সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, জামান ক্ষোভ থেকে পদত্যাগ করেছেন। কতিপয় নেতা কেন্দ্রকে ভুল তথ্য দিয়ে দলের ক্ষতি করছেন। ত্যাগী নেতাকর্মীরা দলে অবমূল্যায়িত হলে তখন খারাপ লাগাটাই স্বাভাবিক।

সিলেট জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ইশতিয়াক সিদ্দিকী বলেন, সিলেটে স্বেচ্ছাসেবক দলের রাজনীতির যাত্রা হয়েছিল শামসুজ্জামান জামানের হাত ধরে। তাকে অবজ্ঞা করে সিলেটের কমিটি দেওয়া, তার পদত্যাগ সিলেটে বিএনপির রাজনীতিতে বিরাট নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

গত ১৭ আগস্ট রাতে কেন্দ্র থেকে সিলেট জেলা ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। ৬১ সদস্যের প্রতিটি ইউনিটে প্রাধান্য পান খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা খন্দকার আবদুল মুক্তাদিরের অনুসারীরা। বাদ পড়েন জামান অনুসারীদের বেশিরভাগই।

জেলা ও মহানগরের আহবায়ক ও সদস্য সচিবের মধ্যে কেবলমাত্র মহানগর শাখার সদস্য সচিবের পদটি পায় জামান বলয়। বাকি শীর্ষ তিন পদ বাগিয়ে নেন মুক্তাদির। এছাড়া আহ্বায়ক কমিটিতে জামান বলয়ের যেসব নেতার স্থান হয় তাদেরকে দেওয়া হয় জুনিয়র পদ, এমন অভিযোগ ক্ষুদ্ধ ও পদত্যাগী নেতাদের।

বুধবার সিলেট নগরীর মিরাবাজারস্থ একটি হলে জরুরি প্রেস ব্রিফিং করে একযোগে পদত্যাগের ঘোষণা দেন স্বেচ্ছাসেবক দলের ১৪ উপজেলার দায়িত্বশীলসহ শতাধিক নেতাকর্মী।

পদত্যাগের লিখিত ঘোষণা পাঠ করেন জৈন্তাপুর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক আলতাফ হোসেন বিলাল।

পদত্যাগকারীরা হলেন- সিলেট সদর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক শাহিদুল ইসলাম কাদির, জৈন্তুাপুর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক আলতাফ হোসেন বিলাল, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক সুজন মিয়া, গোলাপগঞ্জ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক আবুল কালাম, জকিগঞ্জ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক হাসান আহমদ, বালাগঞ্জ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক হেলাল আহমদ, গোলাপগঞ্জ পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক রাজু আহমদ চৌধুরী, কানাইঘাট উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক নাজিম উদ্দিন, কানাইঘাট পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মিজানুর রহমান, জকিগঞ্জ পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম সাচ্চু, সদর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলে সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক আবুল খয়ের।

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক গিয়াস উদ্দিন বতুল্লা, গোয়াইনঘাট উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক এখলাছুর রহমান, কানাইঘাট উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ফারুক আহমদ মেম্বার, গোলাপগঞ্জ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক রেজাউল ইসলাম রেজা, জকিগঞ্জ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ওয়েছ আহমদ চৌধুরী, জকিগঞ্জ পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক কাওছার আহমদ, বালাগঞ্জ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক শেখ মো.সাবের আহমদ,জৈন্তুাপুর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মিসবাহ আহমদ, সদর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক সালমান আহমদ নান্টু, জালাল উদ্দিন, রাজু আহমদ, আখতার আলী, কালাম আহমদ, মখলিছ আহমদ, আরিফ আহমদ, আব্দুল আহাদ পারভেজ, সিদ্দেক আহমদ পদত্যাগ করেছেন।

পদত্যাগের তালিকায় রয়েছেন- কানাইঘাট উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক মিজান আহমদ, কানাইঘাট উপজেলার স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক বদরুল ইসলাম, গোলাপগঞ্জ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক মাহমুদুল ইসলাম বাচ্চু, মো. আছলাম, সাদিকুর রহমান বাবলু, জৈন্তাপুর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক কামাল হোসেন, মাহবুবুল আলম শাহিন, রুমেল আহমদ, সাইফুল উল্যা আহমদ, জামিল আহমদ, কিবরিয়া আহমদ, জকিগঞ্জ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক আবুল হোসেন, সামাদুর রেজা, বিশ্বনাথ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সাজ্জাদ আলী শিপলু, শেখ শাহজাহান আহমদ।

এছাড়া উপজেলা ও পৌর শাখার তাদের অনুসারী শতাধিক নেতাকর্মী পদত্যাগ করেছেন।

পদত্যাগের ঘোষণার সময় তারা বলেন, একযুগ ধরে আন্দোলন-সংগ্রামে রাজপথে সক্রিয় ভূমিকা রেখে আমরা জেল-জুলুম নির্যাতনের শিকার হয়েছি। অথচ নিষ্ক্রিয় ও অযোগ্য এমনকি কমিটিতে ব্যাংক কর্মকর্তাকে অন্তর্ভুক্ত করে একটি ‘হাস্যকর’ কমিটি উপহার দেওয়া হয়েছে। রাজপথের পরীক্ষিত পরিশ্রমী নেতা মওদুদুল হক মওদুদ সদ্য বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ককে নতুন ঘোষিত কমিটির ৩১নং সদস্য, সিটি করপোরেশনের দুই বারের কাউন্সিল আব্দুর রকিব তুহিনকে ৩৮নং সদস্য, জেলা বিএনপির সাবেক সহ স্বেচ্ছাসেবকবিষয়ক সম্পাদক আমিনুল হক বেলালকে সদস্য, সদর উপজেলার আহ্বায়ক শাহিদুল ইসলাম কাদিরকে সদস্য ও আলতাফ হোসেন বিলালকে ৬১নং সদস্য রেখে ‘অপদস্ত’ করা হয়েছে।

এর আগে গত সোমবার পদত্যাগ করেন সিলেট মহানগর তাঁতী দলের সভাপতি ফয়েজ আহমদ দৌলত, সাধারণ সম্পাদক শওকত আলী ও সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল গফফার।

গত শনিবার রাতে সিলেট মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের নবগঠিত কমিটির ১০ নেতাও পদত্যাগ করেন। তারা হলেন- জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক এমদাদ বক্স, সদস্য থেকে মওদুদুল হক, শহীদুল ইসলাম কাদির, আলতাফ হোসেন বিলাল, আমিনুল হক বেলাল, শাহিদুল ইসলাম চৌধুরী লাহিন। মহানগর কমিটি থেকে পদত্যাগ করেন সদস্য আব্দুর রকিব তুহিন, রুজেল আহমদ চৌধুরী, আব্দুল হান্নান, আক্তার আহমদ।

সর্বাধিক পঠিত


ভিডিও