ইসলাম

মেসি-নেইমারে ভাগ হয়ে আছে কাতার

5620_download (5).jpg

আর্জেন্টিনা জিততেই আচমকা বদলে গেল কাতার। বোধকরি বাংলাদেশের অবস্থাও তাই। কাতার প্রবাসীদের মধ্যে মেসির আর্জেন্টিনার প্রতি সমর্থন বেশি। কাতারিদের সমর্থনও কম নয়। বরং মেসি-নেইমারে ভাগ হয়ে আছে। এই দুই সুপারস্টারই খেলেন পিএসজিতে একসঙ্গে। আর পিএসজি’র মালিক হচ্ছেন কাতারের ধনকুবের আল নাসের খেলাইফি। ২০১১ সনে পৃথিবীর সবচাইতে দামি এই ক্লাবটি কিনে নেন। কাতারে ধর্মের পরেই হচ্ছে ফুটবলের স্থান। বলা হয়ে থাকে, ফুটবল ছাড়া তাদের জীবন অচল।

সে কারণেই হয়তো ফুটবল নিয়ে এতসব মাতামাতি। এজন্যই মেসি এবং নেইমারের প্রতি রয়েছে প্রচণ্ড দুর্বলতা। কিংবদন্তি ম্যারাডোনা এখানে ছিলেন অস্বাভাবিক জনপ্রিয়। ধারাবাহিকভাবে মেসির প্রতি অন্যরকম ভালোবাসা রয়েছে। সৌদি আরবের কাছে হেরে যাওয়ার পর মেসির জনপ্রিয়তায় কিছুটা ভাটা পড়েছিল। তবে পোল্যান্ডের সঙ্গে  শেষ খেলায় জয়ের পর এখানকার স্থানীয় সময় রাত আড়াইটায়ও মেসি মেসি মেসি শুনেছি।  ট্রেনে পা ফেলার জায়গা ছিল না। অসংখ্য মেসি সমর্থকের নাচ, গান, উল্লাসে কেঁপে উঠছিল মেট্রো রেলের স্টেশনগুলো। ট্রেনে যখন ফিরছিলাম তখন মনে হয়েছিল আজ রাতে হয়তো সবকিছু খুইয়ে ঘরে ফিরবো। কিন্তু আমার ধারণা অমূলক। আমি সুস্থ শরীরে মালপত্র নিয়েই গন্তব্যে পৌঁছেছি। মাঝে মাঝে ভাবি, এমন যদি হতো আমাদের দেশে! এরাও মানুষ আমরাও মানুষ। বলুন তো আমরা কেন পারি না? রাস্তা ঘাটে পুলিশ দেখা যায় না খুব একটা। ট্রেনের ভেতরে পুলিশ আছে কিনা তাও বুঝি না। অনেকে বলেন, সাদা পোশাকে তারা ভীষণ তৎপর। দোহার অলিতে গলিতে যাওয়ার সুযোগ হয়েছে। কেউ কারও দিকে তাকায় না, প্রশ্ন করে না। এত বড় আয়োজনেও তাদের মধ্যে কোনো ক্লান্তি নেই। রাস্তা ঘাটেও সেনা পোশাকে কাউকে দেখা যায় না। লাখ লাখ ফ্যান চষে বেড়াচ্ছেন কাতার। বলে রাখি, পুরো দেশটি ওয়াইফাই নেটওয়ার্কের আওতায়। সিসি ক্যামেরার নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রীয়ভাবে। আজ সকালে যখন ট্রেনে করে মিডিয়া সেন্টারে আসছিলাম  তখন দেখা হলো বাংলাদেশি স্বেচ্ছাসেবক রকিবুল হাসানের সঙ্গে। 

রকিবুল এখানে পড়াশোনা করেন। কাতার সরকারের ডাকে সাড়া দিয়ে তিনি এখন স্বেচ্ছাসেবক। তার কথায়- আমি একজন বাংলাদেশি। এখানে হাজার হাজার মানুষের সেবা দিচ্ছি। এতে আমি এবং আমার পরিবার গর্বিত। এমনি অনেকের সঙ্গে দেখা হয়, কথা হয়। সবাই এক বাক্যে প্রশংসা করছেন কাতার সরকারের। তারা বলছেন, ছোট একটা দেশ বিশ্বকাপ আয়োজন করে কোথায় যে চলে গেল!  ফিরে আসি মেসি প্রসঙ্গে। মেসি আবারো হতাশ করলেন। পোল্যান্ডের বিরুদ্ধে পেনাল্টি পেয়েও গোল করতে ব্যর্থ হন। অথচ তামাম দুনিয়ার ফুটবলপ্রেমীদের চোখ এই গোলের দিকেই ছিল। কিন্তু যথারীতি মেসি ব্যর্থ হলেন। তবে তার সতীর্থরা মেসিকে বিফল হতে দেননি। মেসি পেনাল্টি মিস করে ইতিমধ্যেই লজ্জার রেকর্ড করে ফেলেছেন। আর্জেন্টিনা কাল না জিতলে আর্জেন্টাইনরা তাকে ক্ষমা করতেন কিনা জানি না। ফুটবল ভক্তদের নিশানায়ও থাকতেন তিনি। ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপেও মেসি পেনাল্টি মিস করেছিলেন। আইসল্যান্ডের বিরুদ্ধে তিনি গোলের দেখা পাননি। পেনাল্টি মিস করা অস্বাভাবিক কিছু নয়। প্রচণ্ড স্নায়ুচাপে প্লেয়াররা এমনটা করে থাকেন। 

১৯৯৪ যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বকাপের ফাইনালে রবার্তো ব্যাজ্জিও পেনাল্টি মিস করে ইতালিকে কাঁদিয়েছিলেন। সে কি কান্না! সবাই তাকে অভিযুক্ত করছিলেন। বলছিলেন, এমন সর্বনাশ কি কেউ করতে পারে! আমার নিজের চোখে দেখা সে দৃশ্য। আমি মিডিয়া বক্স থেকে সেদিন অন্য এক ইতালিকে দেখছিলাম। মেসি পেনাল্টি মিস করে সমালোচিত হয়েছেন ঠিকই। কিন্তু তার দল আর্জেন্টিনা জিতেছে। জিতেছে ফুটবল বিশ্ব। বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা কিংবা ব্রাজিল নেই এটা ফুটবল ভক্তরা মানতে চান না। এই মুহূর্তে মেসি, নেইমার ও এমবাপ্পে খ্যাতির শীর্ষে। তাদের বাদ দিয়ে বিশ্বকাপ ভাবাই যায় না। মজার ব্যাপার হচ্ছে- এই তিন সুপারস্টারই খেলেন পিএসজিতে। এখন তিনজন তিন দলে। মেসির রাতটা কেমন কেটেছে জানি না। তবে রাতটা ছিল আর্জেন্টিনার, মেসির নয়।   

সর্বাধিক পঠিত


ভিডিও