সারা বিশ্ব

২০৮০ নাগাদ হাজার কোটি ছাড়াবে জনসংখ্যা, ঘটবে নাটকীয় পরিবর্তন

9407_IMG_8981.jpeg

বর্তমানে আমাদের পৃথিবীতে প্রায় ৮০০ কোটি মানুষের বাসস্থান। প্রতিনিয়তই মানুষের চাপ বাড়ছে সৌরমণ্ডলের একমাত্র বাসযোগ্য গ্রহটিতে। ক্রমবর্ধমান এ চাপ সামলাতে গিয়ে নষ্ট হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য, বাসযোগ্যতা হারাচ্ছে ধরণী। এরই মধ্যে আগামীর পৃথিবীতে জনসংখ্যা পরিস্থিতি নিয়ে ভয়াবহ সতর্কবার্তা দিয়েছে জাতিসংঘ। জানিয়েছে, আগামী ৬০ বছরের মধ্যে চূড়ায় পৌঁছাবে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার। মোট জনসংখ্যা পার করে যাবে হাজার কোটির মাইলফলক। এরপরই ঘটবে নাটকীয় পরিবর্তন।

সম্প্রতি জাতিসংঘ প্রকাশিত ওয়ার্ল্ড পপুলেশন প্রসপেক্টাস-২০২৪ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০৮০-এর দশকের মাঝামাঝি শীর্ষে ওঠা জনসংখ্যার পরিমাণ হবে এক হাজার ৩০ কোটি। তবে এরপরই এ সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমতে থাকবে। শতাব্দী শেষে জনসংখ্যা কমে দাঁড়াবে এক হাজার ২০ কোটিতে। ২১০০ সাল পর্যন্ত এ স্তর বিদ্যমান থাকবে।

এর আগে ২০২২ সালে প্রকাশিত আরেক প্রতিবেদনে জাতিসংঘ জানিয়েছিল, ২০৮০-এর দশক নাগাদ জনসংখ্যা বৃদ্ধি শীর্ষে পৌঁছাবে। ওই সময় বিশ্বে মানুষ হবে এক হাজার ৪০ কোটি। ২১০০ সাল পর্যন্ত একই স্তর বিদ্যমান থাকবে। প্রতিবেদনের আগের সংস্করণগুলোয় জনসংখ্যা বৃদ্ধির এ ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছিল। তবে এখন সংশোধিত তথ্য বলছে, চলতি শতাব্দীতে জনসংখ্যা একটা চূড়ায় পৌঁছে শেষ নাগাদ নাটকীয় পরিবর্তন ঘটবে। ২০ কোটি মানুষ কমে যাবে পরবর্তী দুই দশকে।

নতুন প্রতিবেদন সম্পর্কে জাতিসংঘের ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল অ্যাফেয়ার্স বিভাগের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল লি জুনহুয়া বলেন, ‘জনসংখ্যার বিন্যাসে বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটছে। আগে উচ্চ জন্মহারের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল এমন কিছু দেশে জন্মহার তার চেয়ে কম দেখা যাচ্ছে। বিশ্বব্যাপী নারীরা নব্বইয়ের দশকের তুলনায় এখন গড়ে এক সন্তানের কম জন্ম দিচ্ছেন বলে জানানো হয় প্রতিবেদনে।

আরও বলা হয়েছে, অর্ধেকের বেশি দেশে নারীদের জীবিত সন্তান জন্মদানের হার ২ দশমিক ১ শতাংশের নিচে নেমেছে। অন্যদিকে চীন, ইতালি, দক্ষিণ কোরিয়া ও স্পেনসহ এক-পঞ্চমাংশ দেশে নারীপ্রতি জীবিত সন্তান জন্মর হার ১ দশমিক ৪ শতাংশ। যাকে জাতিসংঘ বলছে, ‘অতিনিম্ন জন্মহার’।

জাতিসংঘের প্রতিবেদনে উল্লিখিত ৬৩টি দেশে বর্তমানে বিশ্বের ২৮ শতাংশ মানুষের বসবাস। এর মধ্যে রয়েছে চীন, জার্মানি ও জাপান। এ দেশগুলো এরই মধ্যে জনসংখ্যা বৃদ্ধির শীর্ষ স্তর ছুঁয়েছে। ২০২০ সালের শীর্ষ স্তরের তুলনায় ২১০০ সাল নাগাদ ইউরোপের জনসংখ্যা ২১ শতাংশ কমে যাবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হচ্ছে। এটি যে কোনো মহাদেশের হিসাবে বড় ধরনের পতন। জনসংখ্যার এ পতনকে পুরোপুরি নেতিবাচকভাবেও দেখছেন না অনেকে।

তাদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সংকট কিছুটা প্রশমিত হতে পারে। জীবাশ্ম জ্বালানি পুড়িয়ে কার্বন নিঃসরণ করে এমন কার্যকলাপ কমতে পারে। এছাড়া খাদ্য উৎপাদন, বাসস্থান ও কর্মসংস্থানের জন্য বন উজাড়ের মতো ঘটনাও কমবে।

বিশ্বব্যাংকের মতে, বর্তমানে বছরে প্রতিটি মানুষ গড়ে ৪ দশমিক ৩ টন কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণে অবদান রাখে। কিন্তু কার্বন নিঃসরণে অনেক বেশি অবদান রাখলেও পশ্চিমা দেশগুলোকে আলাদাভাবে চিহ্নিত করা হয় না।

জুনহুয়া বলেছেন, ‘বৈশ্বিক জনসংখ্যার শীর্ষ স্তর পূর্বাভাসের আগে অতিক্রম করা একটি আশাব্যঞ্জক বিষয়। এ কারণে জনসংখ্যা কমে যাওয়ায় পরিবেশের ওপর চাপ কমতে পারে।’

তবে এটিও মনে রাখতে হবে, কর্মক্ষম জনসংখ্যার পতন ও বয়স্কদের সংখ্যা বাড়লে তা পাবলিক ফাইন্যান্সের মতো নতুন চাপ তৈরি করবে। এ বিষয়ে লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্সের অধ্যাপক চার্লস গুডহার্ট বলেছেন, ‘সমস্যা হলো কম কর্মী মানে কম প্রবৃদ্ধি ও কম কর। এছাড়া বয়স্কদের জন্য আরও যত্ন, ওষুধ ও সেবামূলক সহায়তা দিতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘যদি ওষুধ ও চিকিৎসাবিজ্ঞান বয়স্কদের রোগের মোকাবিলা করতে না পারে তাহলে সমাজে অনেক বেশি বৃদ্ধ থাকবেন যাদের দেখাশোনা করার জন্য খুব কম যুবক থাকবে।’

এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় এখনই পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ। দ্রুত বয়স্ক জনসংখ্যা বাড়ছে এমন দেশগুলোকে উৎপাদনশীলতা ও কর্মজীবন প্রসারিত করতে প্রযুক্তি ব্যবহারের পরামর্শও দিয়েছে সংস্থাটি।

সর্বাধিক পঠিত


ভিডিও